ফরিদগঞ্জে আনারস চাষে আবু বক্কর সিদ্দিক সাবলম্বী
প্রকাশ: ২০২১-০২-০৩ ০৬:২৭:১৮ 214 Views

Spread the love
প্রান কৃষ্ণ দাসঃ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পশ্চিম সুবিদপুরের ২নং ওয়ার্ডের তাম্রশাসন এলাকায় জলডুবা নামের আনারস চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি ঐ এলাকার মৃত আব্দুল গফুর মিজির ছেলে। ১৯৮২ সালের পর থেকে তিনি ছাত্র অবস্থায় এই আনারস চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ে সাফল্যে পৌঁছিয়েছেন। আর এই সাফল্যে তার অন্যান্য ভাইয়েরাও একইভাবে আনারস চাষ করতে শুরু করেন। বর্তমানে ঐখানে তারা ৬ ভাই মিলে প্রায় ৮ একর জায়গা জুড়ে আনারস চাষ করছেন।
২’রা ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সরজমিনে তাম্রশাসন এলাকার আনারসের বাগান দেখতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক ভাগে বিশাল জায়গা জুড়ে আনারস গাছ রোপন করা রয়েছে। এর ফাঁকে ফাঁকে নারিকেল, সুপারি, কাগজি, কলা এবং কাঁঠাল গাছও রয়েছে।
আনারস চাষ দেখতে আসা দর্শনার্থী শাহমুব জুয়েল জানান, ভালোভাবে আনারস চাষ হতে শুধুমাত্র চাঁদপুরের একমাত্র তাম্রশাসন এলাকাতেই দেখছি। যা দেখে খুব ভালো লাগলো। আমার ইচ্ছা আছে আমিও আনারসের বাগান করবো। তবে প্রশাসন যদি আনারস চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করতো তবে আরো ভালো হতো।
এসব ব্যাপারে চাষি আবু বক্কর সিদ্দিকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, জায়গাটি আমার বাবা ক্রয় করেন। জায়গাটির মূল মালিক হচ্ছেন আস্টা মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হেডপন্ডিত। তিনি নোয়াখালি সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আনারসসহ এসব ফলের গাছ ক্রয় করে এখানে লাগিয়েছিলেন। পরে আমাদের কাছে জায়গা বিক্রি করার সময় ফলগাছগুলো আমাদেরকে দেখভাল করতে বলেন। তখন মার্স্টাস পরীক্ষার পর আমি এই আনারস চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ি।
তিনি আরো বলেন, আনুমানিক ১৯৮২ সালের পর থেকে আমি সফলতার সহিত আনারস চাষ করতে শুরু করি। আমার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার অন্যান্য ভাইয়েরা ও আনারস চাষ করতে শুরু করে। বর্তমানে প্রায় ৮ একর জায়গায় আমাদের এই আনারস চাষ হচ্ছে। যা ফরিদগঞ্জের চান্দ্রা বাজার, গল্লাক বাজার, রুপসা বাজার, সাহার বাজার সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতি বছরের আনারসের মৌসুমে বিক্রি হয়। এক বছরে একবারেই আনারসের ফলন আসে। মূলত বৈশাখের শেষে জৈষ্ঠের শুরুর দিকে পাঁকা আনারস পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, এখানে আনারসের পাশাপাশি বছরে প্রায় ৩০ মণ সুপারি হয়। ৩০০ টি নারিকেল গাছের ডাব, কলাবাগানের কলা ও ৮০টি কাগজি গাছের কাগজি বিক্রি হয়। এসব ফলন বিক্রি করেও ভালো টাকা আয় হয়। গেল বছরে শুধু মাত্র আনারস বিক্রি করেই আমার ৬৩ হাজার টাকা মুনাফা হয়েছে।
আনারস চাষের পরিচর্যা নিয়ে তিনি বলেন, যখন স্কুলে একাউন্টিং বিষয়ে ক্লাস করতেন। স্কুল ছুটির পর বাড়ীতে এসে তিনি বাগানে সময় দিতেন। গেল বৎসরের ফেব্রুয়ারির দিকে তিনি অবসর নেন। আর এর পর থেকে তিনি পুরো সময় আনারসের বাগানে দিচ্ছেন। এখানকার মুনাফা দিয়ে তার ৩ ছেলে ৩ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখি ও দাম্পত্য জীবন পার করছেন।
আনারস চাষে প্রতিবন্ধকতার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ইঁদুরের উৎপাতে ব্যাপক ক্ষতি হয় আনারসের। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ আনারস ইঁদুর খেয়ে নষ্ট করে ফেলে।এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সঠিক সমাধানও তিনি পাচ্ছেন না।
আনারস চাষে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনিয়তা রয়েছে জানিয়ে তিনি জানান, আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ৩ যুগের বেশি সময় আমরা আনারস চাষ করছি। বালু মাটি বলেই আনারসের ফলন ভালো হচ্ছে। যদি সরকারীভাবে আমাদের জন্যে প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করতো এবং চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তি সহায়তা দিতো। তাহলে আমরা আরো ভালভাবে আনারস চাষ করতে পারতাম।
এ ব্যপারে কৃষি অধিদপ্তর চাঁদপুরের উপ-পরিচালক মোঃ জালাল উদ্দিন জানান, চাঁদপুর আনারস চাষের উপযোগী জেলা নয়। তবুও বিক্ষিপ্তভাবে ফরিদগঞ্জের তাম্রাশাসন এলাকায় সল্প পরিসরে আনারস চাষ হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি।দ্রুতই আমরা সেখানে পরিদর্শনে যাবো এবং ওই চাষীদের তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সাহায্য সহযোগিতা করবো।
ট্যাগ :
আনারস©2016 CHANNEL KORNOFULI (PVT) LTD (Reg no : 12384)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে আবেদিত।
Developed by CHOST